আদার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

আদার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

আদা আমাদের সকলের পরিচিত মসলা জাতীয় খাদ্য। কিন্তু আদার কি পরিমান উপকারিতা রয়েছে তা আমরা অনেকে জানিনা, তাই আজকে আমরা আদার উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম  সম্পর্কে জানব।

আদার অনেক গুণাগুণের জন্য বিশ্বের অনেক দেশে আদাকে ওষুধি উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছে। আধার মধ্যে রয়েছে এনার্জি, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট,পটাশিয়াম এবং ফসফরাস। আদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, মাথা ব্যথা, ঠান্ডা, সর্দি ও কাশি সহ অনেক রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে। কথায় বলে, আদা শরীরের সকল রোগ নিরাময় করতে সাহায্য করে।

আদার উপকারিতা

আদা এখন রান্নার কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, আদা এখন অনেক রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। আদা থেকে মানুষ অনেক উপকারিতা পাচ্ছে বলে অনেক রোগের ক্ষেত্রে মানুষ আদা ব্যবহার করছে। এখন আমরা আদার কিছু প্রয়োজনীয় উপকারিতা  সম্পর্কে জানব।

  • সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়

সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আদা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তাই আমাদের যদি সর্দি, কাশি  গলা ব্যথা হয় তাহলে আমরা আদা খেলে খুব তাড়াতাড়ি তা সেরে যাবে।

  • ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য আদার গুরুত্ব অপরিসীম। আদা খেলে কোলন ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। কাঁচা আদায় জিনজেরল নামক একটি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে যেটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • ওজন কমাতে সাহায্য করে

আদা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ আদার মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • বমি-বমি ভাব নিয়ন্ত্রণ করে

আমাদের অনেকের অনেক কারণে বমি-বমি ভাব হয় এই বমির ভাব নিয়ন্ত্রণের  জন্য আদা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের যদি বমি বমি ভাব হয় তাহলে আমরা আদাকে চিবিয়ে কয়েক ফোঁটা আদার রস খাবো তাহলে আমাদের আর বমি বমি ভাব হবে না।

আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা বাসে উঠলে বমি বমি ভাব আসে, তারা বাসে উঠার আগে আদার একটা টুকরা গালে দিতে পারেন তাহলে আপনাদের থেকে স্বাভাবিক লাগবে আর বমি ভাব হবেনা

  • বুকের ব্যথা ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যাদের গ্যাস্টিকের কারণে বুকের ব্যথা শুরু হয়ে যায়, তাহারা প্রতিদিন এক টুকরো করে আদা খেতে পারেন। কারণ আদার মধ্যে যে উপাদান গুলো রয়েছে সেগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে।

কাঁচা আদা ও শুকনো আদা খেলেও এই উপকারিতা গুলো পাওয়া যায়।

আদা ও লেবুর উপকারিতা

আদা ও লেবুর অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে। আমরা এখন এটির কিছু পরিচিত উপকারিতা সম্পর্কে জানব।

  • আদা খেলে একজন মানুষের ও ওজন ও পেটের মেদ কমে যায়। তাই যাদের ওজন বেশি ও পেটের মেদ বেশি তারা নিয়মিত আদা ও লেবু খেতে পারেন।
  • আমাদের মধ্যে যাদের খাবার হজম হয় না ও ক্ষুধা  নিয়ন্ত্রণে থাকেনা তারা আদা ও লেবু নিয়মিত খেতে পারেন। কারণ আদা ও লেবু খেলে ক্ষুধা  নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং খাবার হজম হওয়া প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
  •  যাদের শরীরের চর্বি বেশি তারা নিয়মিত আদা ও লেবু খেতে পারেন কারণ আদা ও লেবু শরীরের চর্বি কমাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আদা পানি তৈরির নিয়ম

এখন আমরা কিভাবে আদা-পানি তৈরি করতে হয় সে সম্পর্কে জানব। আদা-পানি তৈরি করতে হলে প্রথমে আমাদেরকে একটি মধ্যম আকারের আদা নিয়ে সেটিকে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে, তারপর আদা এটিকে খোসা ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে রাখতে হবে।এরপর ডেকের মধ্যে ৪-৫ কাপ পানি নিয়ে পানিগুলো গরম হলে আদাগুলো গরম পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে।

তারপর পানিগুলো কিছুক্ষণ ফুটাতে হবে যাতে করে আদার উপকরণ ভালোভাবে পানির সাথে মিশে যায়। কিছুক্ষণ পর পানিগুলো নামিয়ে পরিমাণমতো ঠাণ্ডা করুন এবং আদার টুকরোগুলো ফেলে দিল। এরপর প্রাণীগুলো চাইলে খেয়ে ফেলতে পারেন।আদা-পানির সাথে লেবুর রস ও মধু মিশালে এটি আরও ভালো উপযোগী হয়ে উঠে।

আদা খাওয়ার নিয়ম

আদা খাওয়ার অনেক নিয়মকানুন হয়েছে তবে এমন কিছু নিয়ম আছে যে নিয়ম অনুসরণ করে আদা খেলে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

  • প্রতিদিন রং চা এর সাথে আদা খেতে পারেন এটি খুব কার্যকরী একটি পদ্ধতি।
  • প্রতিদিন  আদার-পানি তৈরি করে খেতে পারেন।
  • আদা-পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • আদা-পানির সাথে মধু মিক্স করে খেতে পারেন।
  • আবারা আদা-পানির সাথে মধু ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

সহবাসের আগে আদা খেলে কি হয়

আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যৌন সমস্যায়  এজন্য বিভিন্ন ধরনের ঔষধ খেয়ে থাকি। আর এই ঔষধ গুলো খাওয়ার পর আমাদের শরীরের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এইজন্য আমাদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি ও সহবাসের সময় বাড়ানোর জন্য সহবাসের আগে আদা খেতে হবে।

আদা খাওয়ার অপকারিতা

আদার অনেক গুনাগুন রয়েছে এটা আমরা সবাই জানি, এই জন্য আদা খাওয়া বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ আদার যেমন গুনাগুন রয়েছে তেমনি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।

  • একজন গর্ভবতী মহিলা আদা খেলে তার সন্তানের ঝুঁকির পরিমাণ বেশি থাকে।
  • যাদের এলার্জির সমস্যা আছে তারা যদি আদা খায় তাহলে তাহাদের এলার্জির পরিমাণ আরো বেড়ে যায় এবং তাহাদের শরীর ফুলে যায়।
  • যারা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের জন্য ঔষধ খায় তাহাদের যদি আদার পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে।
  • যাহারা আদা বেশি খায় তাদের ডায়রিয়া ও পেট ব্যথা শুরু হয়।

আমাদের শেষ কথা

কথাই বলে আদা সকল রোগের দাদা এর জন্য আমরা সঠিক পদ্ধতিতে বেশি বেশি আদা খাওয়ার জন্য চেষ্টা করব। আজ যারা আদা খেলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন তারা আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। বিশেষ করে, গর্ভবতী মায়েরা আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

>আরো জানুন :
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url