ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা ও উলটকম্বল খাওয়ার নিয়ম

ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা ও উলটকম্বল খাওয়ার নিয়ম

দেশে জন্মানো ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম ঔষধি গাছ হলো ওলট কম্বল। আর এই গাছের ইংরেজি নাম হচ্ছে ডেভিলস কটন। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় উলটকম্বল গাছ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাতেই উলটকম্বল গাছ দেখা যায়। উলটকম্বল গাছের পাতা, ডাল, মূল ও বাকল বিভিন্ন রোগের ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

ওলট কম্বল গাছের উপকারিতাউলটকম্বল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায়, ওলট কম্বল গাছের ছবি ও ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায় এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি যাতে করে আপনি উলটকম্বল গাছ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নিতে পারেন।

> আরও পড়ুন – আমলকি খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

ওলট কম্বল গাছ চেনার উপায়

উলটকম্বল গাছের শাখার গোড়ার পাতা দেখতে হৃৎপিণ্ডের মতো কিন্তু পাতার সামনের দিকটা সরু, উজ্জ্বল সবুজ রঙের গাছটি তেমন বেশি মোটা হয়না। এই গাছটি সাধারণত ৮ থেকে ১০ ফুট লম্বা এবং ২-৩ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট হয়ে থাকে।

উলটকম্বল গাছের ছালে রেশমের মতো আঁশ থাকে এবং এই গাছের ফুলের রঙ মেরুন। এই গাছের ফল দেখতে পঞ্চকোণবিশিষ্ট লোমাআবৃত যা কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে ধূসর বর্ণ ধারণ করে।

> আরও পড়ুন – অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা, অপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

ওলট কম্বল গাছের ছবি

উলটকম্বল গাছ ভালোভাবে চেনার জন্য নিচে উলটকম্বল গাছের ছবি দেওয়া হলো।

ওলট কম্বল গাছের ছবি

ওলট কম্বল গাছ কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকায় উলটকম্বল গাছ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। বাংলাদেশে পাহাড়ি বনাঞ্চলের পাশাপাশি গ্রাম, শহর, বিভিন্ন বাগান, রাস্তার ধার, ভেষজ বাগানে উলটকম্বল গাছ পাওয়া যায়।

সাধারণত সব ধরনের সুনিষ্কাশিত মাটিতে উলটকম্বল গাছ জন্মে। তবে দো-আঁশ মাটিতে উলটকম্বল গাছ ভালো হয়। এ গাছ ছায়া সহ্য করতে পারে যার কারণে বাড়ির আশেপাশের অনেক বাগানে এই গাছ দেখা যায়।

ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

উলটকম্বল গাছের পাতা, ডাল, মূল ও বাকল বিভিন্ন রোগের ওষুধের কাজে লাগে। ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা পেতে হলে আপনাকে উলটকম্বল গাছ খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কিত ভালোভাবে জানতে হবে।  চলুন ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই,

কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা

উলটকম্বল গাছের বাকল ও ডাঁটা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে আঠালো পদার্থ বের হয় যা প্রতিদিন সকালে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে খেলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অশ্ব রোগে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা

যাদের অশ্ব রোগ আছে বা যাদের মলত্যাগে সমস্যা হয়, খাবার ঠিকভাবে হজম না হওয়ার কারণে মলদ্বারে ঘা হয়ে যায়, তাদের জন্য ওলটকম্বল গাছের উপকারিতা অনেক বেশি।

যদি আপনি প্রতিদিন সকালে ওলট কম্বল গাছের শেখড় একগ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পান করেন। সেটি আপনার মলত্যাগে অনেক বেশি সহায়তা করবে এবং ধীরে ধীরে আপনার অশ্বরোগ ভালো হয়ে যাবে।

এছাড়াও উলটকম্বল গাছের পাতার ডাঁটা প্রস্রাবের জ্বালাপোড়ার উপশম। এটা আমাশয় রোগের জন্যও উপকারী।

গনোরিয়া ও ফোঁড়ার কাজে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা

উলটকম্বল গাছের পাতা ও কাণ্ডের রস গনোরিয়া ও ফোঁড়া  রোগের জন্য বেশ উপকারী। যারা গনোরিয়া ও ফোঁড়ার সমস্যায় পড়বেন তারা উলটকম্বল গাছের পাতা ও কাণ্ডের রস ব্যবহার করবেন তাহলে আপনি ভালো ফলাফল পাবে কারণ এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি।

জরায়ু সমস্যায় ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা

জরায়ু সমস্যার কারণে যাঁরা মা হতে পারছেন না, বা যাদের মা হওয়ার সম্ভাবনা দিন দিন কমে যাচ্ছে, আপনারা কিন্তু জরায়ু সমস্যা সমাধানের জন্য ওলট কম্বল গাছের বাকল ও শিকড়কে ঔষধ হিসেবে ধরে নিতে পারেন।

এই ক্ষেত্রে আপনাদেরকে উলট কম্বল গাছের বাকল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ওলট কম্বল গাছের বাকল পানিতে ভিজিয়ে রাখলে একটা আঠালো রস বের হয়ে আসে। সেটা যদি আপনি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনার বন্ধ্যাত্ব বা জরায়ু সমস্যা অথবা মা না হওয়ার সমস্যা থেকে আপনি সমাধান পেতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা

যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে তারা ওলট কম্বল গাছের পাতার রস খেতে পারেন। একটি বড় পাতিলে পানি গরম করতে দেওয়ার পর সেখানে কিছু ওলট কম্বল গাছের পাতা দিয়ে দিবেন। ১০-১৫ মিনিট পানি সিদ্ধ করবেন। সিদ্ধ হওয়ার পরে সেই পানি যদি আপনি সকালে খালি পেটে বা রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মিত খেতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে।

চুলের যত্নে ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা

যাদের চুল পড়ে যাচ্ছে বা যারা চুল ঘন কালো উজ্জ্বল করতে চাচ্ছেন, তারা ওলট কম্বল গাছের পাতার রস ব্যবহার করুন। চুল ঘন কালো উজ্জ্বল দেখাতে, ২টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল এর সাথে ২ চা-চামচ ওলট কম্বল গাছের পাতার রস মিশ্রিত করে যদি মিশ্রিত তেল টি হালকা গরম করে আপনি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করেন, তাহলে ২০-৩০ দিনের মধ্যে আপনার চুল ঘন কালো এবং উজ্জ্বল হয়ে যাবে।

সুতরাং বন্ধুরা, আজকে এই লেখাটির মাধ্যমে ওলটকম্বল গাছ কি? এবং ওলট কম্বল গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আপনারা জানলেন।

আশা করবো আজকের প্রতিবেদনটির মাধ্যমে নিজেদের উপকার অনুযায়ী ওলটকম্বল গাছ এর বিভিন্ন উপকারিতা আপনারা ব্যবহার করবেন।

গবাদিপশুর পাতলা পায়খানা, বিলম্ব প্রজনন এবং হাঁস-মুরগির বিভিন্ন চিকিৎসায় উলটকম্বলের ব্যবহার রয়েছে।

আরও পড়ুন-

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url